দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন গ্রন্থাগার
দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম গ্রন্থাগারগুলির একটিযশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি।
বঙ্গের একাংশের মানুষের জ্ঞানচর্চার স্বাক্ষী হিসেবে এখনো স্বমহিমায় টিকে আছে যশোর পাবলিক লাইব্রেরি। আড্ডা, বিনোদনের এ ক্ষেত্রটি পিপাসা মিটিয়েছে জ্ঞানপিপাসু গবেষক, দার্শনিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জ্ঞান আহরণের সংরক্ষণ করেছে দুর্লভ, দুষ্প্রাপ্য, পান্ডুলিপি আর অগণিত বই।
১৮৫০ সালে পাবলিক লাইব্রেরি এ্যাক্ট পাশ করে বৃটিশ পার্লামেন্ট। পরের বছর ১৮৫১ সালে মেদিনীপুরের উপমহাদেশের প্রথম পাঠাগার প্রতিষ্ঠা হয়। ওই বছরই যশোরে নির্মিত হয় আরেকটি পাবলিক লাইব্রেরি। লাইব্রেরি বিষয়ক গবেষক ড. মোফাখখর হোসেন ও শ্রী বিষ্ঞুশর্মার দাবি অনুযায়ী এ লাইব্রেরিটিই উপমহাদেশের দ্বিতীয় গণপাঠাগার। কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব ইন্ডিয়া এবং লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের দাবির স্বপক্ষে তথ্য-প্রমাণও পেয়েছেন গবেষকরা। সে হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম গণপাঠাগার যশোর পাবলিক লাইব্রেরি। যা বর্তমানে যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি হিসেবে পরিচিত।
শুধু প্রতিষ্ঠাকালের দিক বিবেচনাতেই এ লাইব্রেরির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়নি।
বাংলা, আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি গ্রন্থসহ দুই শতাধিক পাণ্ডুলিপি ও তালপাতার পুঁথি আছে। যেমন আছে হাতে লেখা কবি কালিদাসের পুঁথি। হাতে লেখা মহাভারতও আছে। আছে প্রাচীন রামায়ণ। নলখাগড়ার কলমে আর ভূষা কালিতে লেখা দুর্গাপূজা পদ্ধতির বর্ণনা আছে। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক গ্রন্থের মালিক এই লাইব্রেরি।
লাইব্রেরিটিতে সব বিষয়ের বই-ই হাতের নাগালে পাওয়া যায়। ফলে শিক্ষার্থীসহ নানা শেণী-পেশার মানুষ মনের খোরাক মেটাতে আসেন এখানে।
এখানকার মোট বইয়ের ৬০ শতাংশ উপন্যাস, রেফারেন্স বুক ৩০ শতাংশ ও গবেষণাগ্রন্থ আছে ১০ শতাংশ। এখানে আছে প্রায় ৭০ হাজার ৮০৮টি বাংলা বই, ১৯ হাজার ৪২৪টি ইংরেজি বই এবং বাকী অন্যান্য ভাষার বই। লাইব্রেরিতে নিয়মিত সাহিত্য আসর বসে। আছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কর্নার ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে আছে ‘মাইকেল কর্নার’। কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে আছে ‘নজরুল কর্নার’ আর যশোরের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানার জন্য আছে ‘যশোর কর্নার’। এ ছাড়া খবরের কাগজ পড়ার জন্য আলাদা পাঠকক্ষ আছে। শিশুদের জন্য রয়েছে ‘শিশু বিভাগ’। ডিজিটাল লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে বই লেনদেন করা হয়।
প্রযুক্তি নির্ভর পাঠ্যাভ্যাসের কারণে এখন লাইব্রেরিতে পাঠকের সংখ্যা অনেক কমেছে।
যুগের সন্ধিক্ষণে এসে স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট, কম্পিউটারের কাছে হার মানতে শুরু করেছে ঐতিহাসিক এ স্থাপনাটি। বোদ্ধারা বলছেন, এখনো জীবন্ত এ জ্ঞানভান্ডারটিকে তার বিকাশের পথে চলমান রাখতে নিতে হবে যুগোপযোগী পদক্ষেপ।
Comments
Post a Comment